
তাদের একজন ল্যাফটেন্যান্ট জেনারেল কামাল মতিনউদ্দিন তার সম্পর্কে লিখেছেন ডঃ মুনতাসির মামুন 'পাকিস্তানী জেনারেলদের মন' বইতে। একটু লক্ষ করলে দেখবেন পাকিস্তানী উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই ছিলেন প্রবল বাঙালী বিদ্বেষী। তাদের বাংলা বিদ্বেষের পরিচয় পাওয়া যায় তাদের লেখা বিভিন্ন আত্মজীবনীতে। সেরকমই একজন বাঙালী বিদ্বেষী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামাল মতিনউদ্দিন; ছিলেন প্রচন্ড হিন্দু বিদ্বেষী একজন মানুষ, তিনি তার অধিনস্ত বাঙালী সৈনিকদের নাম ধরে ডাকতেন না, বাঙাল বলতেন।
বাঙালী মুসলমান সম্পর্কে তার মনোভাব ছিলো, তারা নাচ গান এবং কবিতা খুব পছন্দ করে। আর ভারতের হিন্দুরা নাচ, গান ও কবিতায় পারদর্শী এসব কারণেই বাঙালী হিন্দুরা বাঙালী মুসলমানদের ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছিলো। উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুরা এদের ভেতরে এতটাই প্রভাব ফেলেছিলো যে এরা হিন্দু এবং ইসলাম ধর্মের মাঝামাঝি একটা ধর্ম পালন করতো। পাকিস্তান না টেকার পেছনে তার মতে একটা কারণই যথেস্ট, পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানেরা আসল মুসলমান আর পূর্ব পাকিস্তানের মোসলমানেরা হিন্দু।
১৬ ডিসেম্বর নিয়াজীর আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সে বলেছিলো, "We Will Not Let The Bastard Rule The Country" পরবর্তীতে এই জেনারেল কামাল মতিনউদ্দিন একবার ঢাকায় এসেছিলেন, একটা আন্তজাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে। সেই কথা গর্ব ভরে লিখেছেন নিজের বইতে। সেদিন ছিলো শব-ই-বরাতের দিন, তিনি দেখলেন হোটেলের টিভিতে বাংলায় শবেবরাতের ফজিলত বর্ণনা করা হচ্ছে। এরপর আজানের ধ্বনি।
তিনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তার ভৃত্যকে জিজ্ঞেস করলেন; 'প্রতিদিনিই কি নামাজের সময় টিভি থেকে আজান প্রচারিত হয় এখানে...?' ভৃত্য ক্ষুব্ধ গলায় বললো; 'আপনি এখনও বুঝতে পারছেন না যে আমরা মুসলমান, হিন্দু ভেবে আমাদের বাপ-দাদাকে আপনারা হত্যা করেছেন...' আরেকজন পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার সাদুল্লা খান, হিলাল ই জুরাত পদক প্রাপ্ত সেই জেনারেল তার বই 'ইস্ট পাকিস্তান টু বাংলাদেশ' বইতে শহীদ মিনারের কি বর্ণনা লিখেছে তা সরাসরি তুলে ধরছি; "স্থানীয় হাই স্কুল পেরুবার সময় আমরা দেখলাম একটা শহীদ মিনার।
কোথাকার কোন ভাষা আন্দোলনের সময় নাকি ঢাকার দুই তিনজন ছাত্র মারা যায়... তারপর থেকেই হিন্দুয়ানী বাংলার প্রতিটি স্কুলে স্কুলে শহীদ মিনার গজায়। জিনিসটার একটু বর্ণনা দেই। মিনারের পাদদেশে আছে একটি কবর। প্রতিদিন সকালে মিনার প্রদক্ষিন একটা রিচুয়াল। খালি পায়ে, হাতে ফুল নিয়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নিতে হয়।" এই জেনারেল সাহেব একাত্তরে কিশোরগঞ্জে কর্মরত ছিলেন।
ভাষা আন্দোলন আর শহীদ মিনার সম্পর্কে তার মনোভাব তুলে ধরলাম। স্বাধীনতার মর্ম বুঝতে হলে পাকিস্তানীদের মনস্তত্ত্ব বোঝাটা জরুরী। তাদের মানসিকতা না বুঝলে আপনি কোনদিনই এই রহস্যের কূল-কিনারা করতে পারবেন না যে কেন একটা সেনা বাহিনী এত নির্মম ভাবে মানুষ হত্যা করেছিলো।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মানসিকতা যে এখনো পরিবর্তন হয় নি এতটুকু তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ আজকের বেলুচিস্তান। হাজার হাজার নিরীহ বেলুচের রক্তে রাঙা পাকিদের হাত... এই বিকৃত মানসিকতার মূলে আছে মৌলবাদ, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি... ধর্মের জন্য ক্রুসেডে যত রক্ত বয়েছে সম্ভবত উপমহাদেশে রক্ত ঝরেছে তারচেয়ে বেশী...
লিখা - আরিফ রহমান
No comments:
Post a Comment