google add

Sunday, October 26, 2014

বঙগবন্ধু সম্পর্কে জাফারর্ ইকবাল

Add caption
আমি যখন এটা লিখছি তখন বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৪ বছরে পা দিয়েছে। একজন মানুষ যখন ৪৪ বছরে পা দেয় সে তখন পূর্ণবয়স্ক হয়ে যায়। দেশের জন্য সেটা সত্যি নয়, ৪৪ বছর একটা দেশের জন্য এমন কিছু বয়স নয়। আমাদের দেশের জন্য তো নয়ই, এই ৪৪ বছরের ভেতর ১৫ বছর ছিলো মিলিটারি শাসকদের কব্জায়-দেশের মন মানসিকতা তখন একেবারে উল্টোদিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের দেশ আসলে শূন্য থেকে শুরু করেনি, নেগেটিভ থেকে শুরু করেছে। এই ৪৪ বছরেও দেশের কয়েকটা খুব বড় অপ্রাপ্তি রয়েছে, আমার ধারণা সেগুলো গুছিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা সঠিকভাবে অগ্রসর হতে পারবো না।
তার একটা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান। আমরা যারা স্বচক্ষে এই দেশটাকে জন্ম নিতে দেখেছি তারা জানি বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু প্রায় সমার্থক দুটি শব্দ। বঙ্গবন্ধুর যদি জন্ম না হতো তাহলে আমরা সম্ভবত বাংলাদেশ পেতাম না। ১৯৭৫ সালে সেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে এই দেশে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হলো যেখানে বঙ্গবন্ধুর সঠিক অবস্থান দূরে থাকুক, এই মানুষটির অস্তিত্বই রীতিমত মুছে দেওয়া হলো। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর নাম প্রথমবার রেডিও-টেলিভিশনে উচ্চারিত হতে শুরু করলো। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রচারণা এতো ব্যাপক আর পূর্ণাঙ্গ ছিল যে এখনো অনেকেই মনে করে যে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করে সে বুঝি আওয়ামী লীগের সমর্থক।

 বঙ্গবন্ধুর প্রতি অসম্মান দেখানোর বিষয়টা সবচেয়ে উৎকটভাবে দেখিয়েছেন খালেদা জিয়া, বঙ্গবন্ধুকে যেদিন সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে সেই দিনটিকে নিজের জন্মদিনের উৎসব করার দিন হিসেবে বেছে নিয়ে। আমাদের পারিবারিক একজনের জন্মদিন ঘটনাক্রমে নিজেদের অন্য একজনের মৃত্যুদিন হয়ে যাওয়ার কারণে জন্মদিনটি আর সেদিন পালিত হয় না। অথচ বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মানুষের সপরিবারে নিহত হওয়ার দিনটিতে বিছানার মতো বড় কেক কেটে জন্মদিনের উৎসব পালন করা যে কতো বড় রুচিহীন কাজ সেটি একটি রাজনৈতিক দল জানে না, সেটি বিশ্বাস করা কঠিন। এই বিষয়টা থেকে একটা বিষয়ই শুধু নিশ্চিত হওয়া যায় যে বিএনপি ( এবং তাদের সহযোগী দলগুলো) এখন বঙ্গবন্ধুকে তার যথাযথ সম্মান দিতে রাজী নয়।

সত্যি কথা বলতে কী তাকে অসম্মান করাটা তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ সবচেয়ে বিচিত্র ব্যাপার হচ্ছে বিএনপি দলটির জন্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর অনেক পরে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে বিএনপি কিংবা তাদের প্রতিষ্ঠাতা কোনো মানুষের সাথে তার কোনো বিরোধিতা হওয়ার কোনো সুযোগ পর্যন্ত ছিল না। তাহলে এই মানুষটিকে তাঁর যথাযথ সম্মান দেখাতে এই দলটির এতো অনীহা কেন? আমি রাজনীতির বিশ্লেষক নই, রাজনীতির অনেক মারপ্যাচ আমি বুঝি না। কিন্তু অন্তত এতোটুকু জানি যে, ‘কমন সেন্স’ দিয়ে যদি রাজনীতির কোনো একটা বিষয় বোঝা না যায় তাহলে সেখানে অনেক বড় সমস্যা আছে। তাই কোনো রাজনৈতিক দল যদি বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চায়, অথচ সেটা করার জন্য এই দেশের স্থপতিকেই অস্বীকার করে তাহলে সেটা হচ্ছে ভুল রাজনীতি।

ভুল রাজনীতি করলে একটা দল কতো দ্রুত ক্ষমতাহীন হয়ে যেতে পারে সেটা বোঝার জন্য কী আইনস্টাইন হতে হয়? হয় না। কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বিএনপিকে যদি এই দেশের রাজনীতিতে টিকে থাকতে হয় তাহলে তাদের সবার আগে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা স্বীকার করে নিতে হবে। আমরা সব সময়ই রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সম্প্রীতির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি দেশ, দেশের পতাকা, দেশের জাতীয় পতাকার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ দেশের স্থপতিকে নিয়েই বিভ্রান্তির মাঝে থাকে তাহলে তারা কোন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করবে?

No comments:

Post a Comment